Total Pageviews

Monday, September 21, 2015

আমার কথা - দুই



স্কুল ফাইনাল পরীক্ষার রেজাল্ট বেরিয়েছিল, মনে আছে, ৪ঠা আগস্ট । পাশ তো করলাম,কিন্তু বই কেনা কলেজের মাইনে, ট্রেনের মাসিক টিকিট এসবের টাকা পাবো কোথায় ?  একটা টিউসানি পেয়ে গেলাম । ক্লাস সিক্সএর ছেলে। সেই ছিল আমার প্রথম টিউসানি, সেই প্রথম একদম নিজের আয় হাতে পাওয়া । দশটাকা মাসে । সঙ্গে ক্লাস টুএর একজন ফাউ । প্রি-ইউনিভার্সিটি পড়তে পড়তে একটা লাইব্রেরীতে লাইব্রেরিয়ানের কাজ পেলাম । মামুলি লাইব্রেরী নয় । আড়িয়াদহ এসোসিয়েশন লাইব্রেরী এখন ১৪৪ বছর বয়স । মাসে কুড়ি টাকার সান্মানিক, তখন তাইই অনেক । লাইব্রেরিয়ানের কাজটা যে আমাকে কি আনন্দ দিল ! বইএর জগতে না ঢুকলে তো বোঝা যায় না । সাহিত্য আর ইতিহাস পড়ার নেশাটা যেন রক্তের মধ্যে মিশে গেলো ।

বেশ কয়েকটা টিউসানি পেয়ে গেলাম । উজ্বল সব তরুণ । সত্তরের দশকে নকশাল আন্দোলনের সময়, অনেকেরই মনে আছে বারাসাতের রাস্তায় আটজন তরুণের বস্তাবন্দি লাশ ছড়িয়ে দিয়েছিল কারা যেন । তার মধ্যে একজন ছিল আমার ছাত্র । তখন আমি ছত্তিশগড়ে চাকরি করি । সেই উত্তাল সময়টা নিরাপদ দূরত্ব থেকে দেখেছিলাম বটে, কিন্তু সেই সময়ের আঁচ থেকে বাঁচতে পারিনি, কেইই বা পেরেছিল ! তখন বাংলায় ‘সোনার টুকরো ছেলেরা সব অশ্বমেধের বলি’, নুনের চেয়েও খুন সস্তা । নিজ সন্তানের ছিন্নশির সোনার থালায় সাজিয়ে কাকে ভেট দিয়েছিলাম আমরা ? ১৯৭১এর ২৫শে জুলাই হাজারিবাগ সেন্ট্রাল  জেলে ১৬জন নকশাল বন্দি তরুণের হত্যা হয়েছিল । সেই ষোল জনের একজন ছিল আমার সহোদর ছোটভাই । সংবাদপত্রে দেখেছিলাম পুলিশের গুলিতে মারা গেছে । অন্য বন্দিদের লেখা নানান পত্রিকায় পড়ে জেনেছিলাম জেলের মধ্যে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছিল । মৃতদেহ ফিরিয়ে দেয়নি,হাতে পায়ে বেড়িপরা জেলের অন্ধকারে লেখা তার কবিতা-গল্প লেখার খাতাটাও ফেরত দেয়নি । এমনকি পরের দিন আমার হাজারিবাগ যাওয়া পর্যন্তও অপেক্ষা করেনি । শুধু একটা টেলিগ্রাম পাঠিয়েছিল । একবার চাইবাসা জেলএ দেখতে গিয়েছিলাম , পকেটের চারমিনারের প্যাকেটটাও খুলে দেখেছিল কারারক্ষী । তখনতো মানবাধিকার ইত্যাদি শব্দগুলো হিব্রুভাষার অচেনা শব্দ ছিল !

এইটুকুই থাক। হৃদয় খোঁড়া বেদনা আমারই থাক, শুধু আমারই । আমি শুধু আমার গায়ে এখনও লেগে থাকা সময় বা দুঃসময়টাকে ছুঁয়ে গেলাম । আজকের ‘গোলাপ দিবস’ আমার কাছে নাহয় এরকমই হোক !

চৌষট্টির ডিসেম্বর থেকে জন্মস্থান ছেড়ে দূরে চলে যাই চাকরি নিয়ে । বছরে এক দুবার কয়েকদিনের জন্য আসতাম । স্থায়ী ভাবে আর ফিরে আসিনি । ১৯৭৫এর পর থেকে আমাদের নিজস্ব কোন ছাদ ছিলনা যে !

No comments:

Post a Comment